মুসলিম বিয়ে রেজিস্ট্রি
বিয়ে রেজিস্ট্রি হচ্ছে বিয়ের লিখিত দলিল। বিয়ে রেজিস্ট্রি করার জন্য আমাদের দেশে একটা আইন আছে। এটাই বিয়ে রেজিস্ট্রিকরণআইন। অর্থাত্ বিবাহ সম্পর্কিত অত্যাবশ্যক তথ্যাবলী সরকারী রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করাই হচ্ছে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন। বিবাহরেজিস্ট্রেশনের কপি হচ্ছে বিবাহের প্রমাণ পত্র। এই আইনটি ১৯৭৪ সালে কার্যকরী হয়। উল্লেখ্য যে হিন্দু বিয়ে রেজিস্ট্রি করণের কোনবিধান নেই।
বিয়ে রেজিস্ট্রেশন কেন প্রয়োজন?
·
কেউ বিয়ের সত্যতা অস্বীকার করতে পারে না;
·
স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া স্বামী পুনরায় বিবাহ করলে স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন;
·
স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রী ভরনপোষণ আদায় করতে পারেন;
·
স্ত্রী নিকাহ্ নামায় উল্লেখিত দেনমোহর আদায় করতে পারেন; যে ক্ষেত্রে দেনমোহর নির্দিষ্ট করা নাই, সেক্ষেত্রে স্ত্রী ন্যায় সংগতপরিমাণ দেনমোহর আদায় করতে পারেন;
·
স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যু ঘটলে দুইজনের মধ্যে যিনি বেঁচে থাকবেন, তিনি মৃতের সম্পত্তি থেকে বৈধ অংশ আদায় করতে পারবেন।
উদাহরণ: আয়েশা আর গফুরের ধুমধামের সাথে বিয়ে হলো। কিন্তু নানা উত্সবের আড়ালে রেজিস্ট্রেশনের কথাটি সবাই বেমালুমভুলে যায়। বিয়ের কিছু দিন পর আয়েশা এবং গফুরের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে এবং গফুর আয়েশাকে প্রাপ্য দেনমোহর ও ভরণপোষণদিতে অস্বীকৃতি জানায়। বিয়ে রেজিষ্ট্রি করা থাকলে আয়েশা সহজেই আদালতে গিয়ে দেনমোহর ও ভরণপোষণ আদায় করতেপারত, কিন্তু এ অবস্থায় দেনমোহর ও ভরণপোষণ আদায় করা খুব কঠিন।
বিবাহ রেজিস্ট্রি ফি
রেজিষ্ট্রি ফি দেনমোহর টাকার উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে রেজিস্ট্রেশন ফি-প্রতি হাজারে দশ টাকা,
সর্বনিম্ন ৫০ টাকা,
সর্বোচ্চ ৪০০০ টাকা।
(কিন্তু সরকার সময়ে সময়ে রেজিস্ট্রেশন ফি পরিবর্তন করে থাকেন)। এছাড়া প্রতিটি বিবাহের রেজিস্ট্রেশন বাবদ নিকাহ রেজিস্টার ২৫টাকা কমিশন পাবেন এবং তিনি বিবাহের অনুষ্ঠানে গিয়ে রেজিস্ট্রি করালে, যাতায়াত ভাতা বাবদ প্রতি মাইলে ১.০০ (এক) টাকাবকরে পাবেন। বর পক্ষ সাধারণত রেজিস্ট্রেশন ফি প্রদান করে থাকেন। রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দেয়া হলে নিকাহ্ রেজিস্টার একটিপ্রাপ্তি রশিদ দিবেন। রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত কাগজ স্বামী ও স্ত্রী দুজনের কাছেই রাখতে হবে। অন্যথায় স্ত্রী সমস্যায় পরলে আদালতেরকাছে সাহায্য চাইতে পারবেন না।
অপরাধ
কাজীর অনুপস্থিতিতে বিয়ে হলেও বিয়ের কথা কাজী অফিসে না জানানো আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। যিনি বিবাহ সম্পন্ন করেছেনতিনিই নিকাহ্ রেজিস্টারের নিকট প্রতিবেদন পেশ করবেন।
শাস্তি
বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইনে (সংশোধিত ৮ই মার্চ,২০০৫) বলা হয়েছে যে, যে সমস্ত বিয়ে নিকাহ রেজিস্ট্রার কর্তৃক সম্পাদিত হয়নি সেসব বিয়ে যে বা যারা করেছেন তিনি রেজিস্ট্রেশনকরার উদ্দেশ্যে উক্ত বিয়ের খবর নিকাহ রেজিস্ট্রারের নিকট দিবেন। যদি কেউ এই নিয়ম পালন না করে তবে সে দুই বছরেরকারাদন্ড বা ৩০০০ (তিন হাজার) টাকা জরিমানা বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবে।
পরামর্শ
প্রতিটি ইউনিয়নে সরকার কর্তৃক নিয়োজিত একজন করে কাজী আছেন। তিনি বিবাহ রেজিস্ট্রি করবেন। যদি বিবাহ সম্পাদনের দিনরেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব না হয় তবে বিবাহের দিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে বিবাহ রেজিস্টারের কার্যালয়ে গিয়ে বিবাহ রেজিস্ট্রি করতেহবে। বিয়ে রেজিস্ট্রেশানের সময় কাজী যে রশিদ দেন সেই রশিদ সংগ্রহ করে রাখতে হবে। কারণ কাবিননামা উঠানোর সময় এইরশিদ দেখালে কাজীকে নির্ধারিত ফি ছাড়া অতিরিক্ত ফি দিতে হয় না। রশিদ দেখাতে না পারলে প্রতি তল্লাসির জন্য প্রতি পাতার জন্যকাজী অফিসে ১.০০ (এক টাকা) দিতে হয়। বিয়েটি রেজিস্ট্রি ভলিউমে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS